রাতের ভোটের সহায়তাকারী ডিসিদের ভাগ্যে কী আছে?
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
১৩-১১-২০২৪ ০৪:০৪:২২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৩-১১-২০২৪ ০৪:১৬:৫২ অপরাহ্ন
২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে কুর্মিটোলা স্কুল ভোট কেন্দ্রের ভিতরে ভোট জালিয়াতি করছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সংবাদচিত্র : সংগৃহীত
বিগত সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে রাতের ভোট ও জাল-জালিয়াতির নির্বাচনে সহায়তাকারী জেলা প্রশাসকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। দিনের ভোট আগের রাতেই গ্রহণ, ব্যাপক জালিয়াতি এবং ডামি নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসাবে সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের অনেককে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার প্রক্রিয়াসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর-রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে সেখান থেকে জানার পরামর্শ দেন তিনি।
জানা যায়, বিগত সরকারের তিনটি নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত ডিসি, বিভাগীয় কমিশনারদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে যারা এখনো চাকরিতে আছেন, তাদের পদোন্নতি পেতে বেগ পেতে হবে। ইতোমধ্যে সাবেক সমাজকল্যাণ সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তিনি ১৪ সালের নির্বাচনের সময় চাঁদপুরের ডিসি ছিলেন। সাবেক ডিসিদের মধ্যে অনেক কর্মকর্তাকেই ইসমাইল হোসেনের মতো ভাগ্যবরণ করতে হতে পারে। সূত্রগুলো জানায়, অনেককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে রাখা হয়েছে, যারা ভোটের সময় ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, ভোটের সময় জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালনকারীরা দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান লঙ্ঘন করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন। তাঁরা ফ্যাসিবাদীদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা স্বৈরাচারী সরকারে ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন। এখনো প্রশাসনে তাদের সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে অনেক কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম মনে করছে, স্বৈরাচার ও স্বৈরাচারের দোসর সাবেক ডিসিরা দেশদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন। তাদের চাকরি থেকে অপসারণ করে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। একই দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে উদাহরণ দেওয়ার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, বিগত সরকারের জোরজবরদস্তির নির্বাচনে যারা জড়িত ছিলেন, তাঁরা শুধু গণতন্ত্রকেই হত্যা করেননি বরং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম শুরু থেকে সরকারের কাছে তাদের চাকরি থেকে অপসারণসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, দু-একজন ছাড়া কারও বিরুদ্ধে সরকার উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়নি। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল গণতন্ত্র হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে-তারা প্রশাসনে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে সরকারকে বিব্রত করছে। এটা জাতির সঙ্গে একধরনের উপহাস করা হচ্ছে। আমরা আবারও দাবি করছি, তারা যেখানেই থাকুক, তাদের চাকরিচ্যুত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আইনের আওতায় আনা হোক। সরকারের কাছে তাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
গত নির্বাচনের সময় লালমনিরহাটের ডিসি ছিলেন মোহাম্মদ উল্যাহ। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে কাউকে জিতিয়ে দেওয়ার কোনো নির্দেশনা সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশন থেকে পাইনি। নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নেওয়ায় কোনো ধরনের অর্থপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। সুতরাং যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নেই, সেখানে কাউকে জেতানো কিংবা হারানোর কাজের কোনো দরকার হয় না। নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অবান্তর ও ভিত্তিহীন।
মৌলভীবাজারের ডিসি ড. ঊর্মি বিনতে সালাম বলেন, আমি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী। যখন যে সরকার থাকবে, সেই সরকার যেখানে যে দায়িত্ব দেবে, তা প্রতিপালন করাই আমার কাজ। আমি মৌলভীবাজারের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকালে কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক অপরাধ করিনি। নির্মোহভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমান সরকার চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে।
২০১৮ সালের দিনের ভোট আগের রাতে সম্পন্ন করতে সহায়তা দেওয়া ডিসিদের একজন হলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) মো. মাজেদুর রহমান খান। তিনি বলেন, মোবাইল ফোনে কল করেছেন, আমি তো আপনাকে চিনি না। বিষয়টি স্পর্শকাতর। আমি আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাই।
লক্ষ্মীপুরের সাবেক ডিসি অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে টেলিফোনে কথা বলতে চাই না। অফিসে অসুন কথা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে তার অফিসে দেখা করতে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি অফিসের বাইরে ছিলেন।
সূত্র: যুগান্তর
বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন/ এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স